সাংবাদিকদের খণ্ডিত তথ্য না দিয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহের পর প্রতিবেদন প্রকাশ করার অনুরোধ জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ। তিনি বলেছেন, ‘সত্যের পরেও কিন্তু কিছু সত্য থেকে যায়, তথ্যের পরেও আরও কিছু তথ্য থেকে যায়। আপনি যদি পৃথিবীর একটি প্রান্তে দাঁড়িয়ে বলেন যে এটা শেষ। আসলে তা নয়।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশন (র্যাক) প্রকাশিত স্মরণিকা ‘সুনীতি’-এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। সাংবাদিকদের এই সংগঠনের ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ আজ এর মোড়ক উন্মোচন করেন। এ সময় দুদকের দুই কমিশনার ও সচিব উপস্থিত ছিলেন।
মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলি, সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে অনেক কিছু অসম্পূর্ণ থেকে যায়। হয়তো সেটা সময়ের সীমাবদ্ধতার জন্য। একটু দেখে নিলেই বোধ হয় জাতির জন্য, দেশের জন্য, সবার জন্য মঙ্গল হয়। আপনাদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা সততার সঙ্গে এবং বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে সংবাদ প্রকাশ করবেন। কোনো ফরমায়েশি বা উদ্দেশ্যমূলক নিউজ যেন না হয়। একটা তথ্য প্রকাশের সময় আরও কিছু আছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখবেন। যাতে রিপোর্টে অসম্পূর্ণতা না থাকে। এটা লক্ষ্য রাখার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’
দুদকের চেয়ারম্যান বলেন, ‘খণ্ডিত তথ্য প্রকৃতপক্ষে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়, অস্থিরতার সৃষ্টি হয়, অযথা হেয়প্রতিপন্ন হয় লোকজন। আমাদের লক্ষ্য কাউকে হেয়প্রতিপন্ন করা নয়, আমাদের কাজ হচ্ছে, দুর্নীতির সঙ্গে যারা যুক্ত আছে, অপরাধের সঙ্গে যারা যুক্ত আছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আশ্রয় নেওয়া।’
রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশন (র্যাক) ও দুদক একসঙ্গে কাজ করবে জানিয়ে দুদকের চেয়ারম্যান মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ র্যাকের নেতৃত্বকে স্বচ্ছতা বজায় রেখে চলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘ভালো কাজ সবাই ভালোভাবে দেখে না। অনেকে ত্রুটি খোঁজে। যারা ত্রুটি দেখে, তাদের দেখতে দিন। আশা করি, আপনারা স্বচ্ছতা বজায় রাখবেন। মানুষ সমালোচনা করে করুক, তাতে কিছু যায়–আসে না।’
ব্যক্তিকেন্দ্রিক কোনো কথা না লিখে নৈর্ব্যক্তিকভাবে লিখবেন
র্যাকের স্মরণিকা ‘সুনীতি’তে প্রকাশিত বাণী ও লেখার প্রসঙ্গে দুদকের কমিশনার (অনুসন্ধান) মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘এটি কিছু লেখা পড়ে মনে হয়েছে, আপনারা দুদককে নিয়ে অনেক ভাবেন। হয়তো আমরা সুশীল মানুষ, সে জন্য হয়তো সব কথা স্পষ্ট করে বলা যায় না। সে কারণে আপনারা কৌশলে সাহিত্যের আবরণে অনেক কিছু প্রকাশ করেছেন।’
মোজাম্মেল হক খান বলেন, রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে বিদগ্ধজনদের মন্তব্য, বাণী এখানে লেখা আকারে প্রকাশিত হয়েছে। সেই হিসেবে “সুনীতি”র যে উপহার—এটা মূল্যবান একটি দলিল। এখানে ছোট ছোট অনেক কথা আছে। যে কথাগুলো নিজেরা বললে কেমন যেন লাগে, সেটা র্যাক অন্যদের দিয়ে বলিয়েছে। আমি মনে করি, এটা আমাদের পক্ষেই আছে, বিপক্ষে নয়।’
মোজাম্মেল হক খান সাংবাদিকদের সাহস করে সত্য কথা লেখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘কাউকে হয়রানির জন্য নয়, দেশের স্বার্থেই লিখবেন। বস্তুনিষ্ঠভাবে লিখবেন এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক কোনো কথা না লিখে নৈর্ব্যক্তিকভাবে লিখবেন। তাহলে মনে হয় দুদক ও দেশ লাভবান হবে।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন দুর্নীতির বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন র্যাকের সভাপতি আহম্মদ ফয়েজ, সাধারণ সম্পাদক জেমসন মাহবুব ও প্রকাশনা সম্পাদক আতিকা রহমান। তাঁরা জানান, র্যাকের নিজস্ব কোনো আয় নেই এবং এর কোনো ব্যাংক হিসাবও এত দিন ছিল না। সম্প্রতি র্যাকের নামে একটি ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে। র্যাকের অফিস খরচসহ সদস্যদের বিনোদনের জন্য অনুদান বা চাঁদার ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। এবার তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, নিজস্ব প্রকাশনা থেকে আয় করে তাঁরা এই ব্যয় নির্বাহ করবেন।
এলজিইডির প্রজেক্ট লিস্টে সাংবাদিকের ভাগ থাকে
এই বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক বলেন, ‘আপনারা একটি খুবই ভালো কাজ করেছেন, ব্যাংক হিসাবে লেনদেন করবেন। প্রকাশনার মাধ্যমে যদি ইনকাম হয়, সেটি খরচ করবেন। আমাদের দেশে যেকোনো সংগঠন হলেই চাঁদাবাজি করা হয়। আপনারা যাঁরা সাংবাদিক, তাঁদের ইনকাম কোত্থেকে তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। কেন ব্যাখ্যা নেই, আমি বিভিন্ন সময়ে বলেছি।’
জহুরুল হক বলেন, ‘আমাদের (সাংবাদিক) ইনকামের ব্যবস্থা থাকা উচিত।… ডিস্ট্রিক্ট লেভেল হোক, থানা লেভেলে হোক—তা নাই। যেহেতু আমাদের বেসিক কোনো ইনকাম নাই, চাঁদাবাজিই একমাত্র পেশা—জাতি ধরে নিয়েছে। কিন্তু আমি শুনে খুবই খুশি হলাম, আপনারা বিনা চাঁদাবাজিতে র্যাক চালাচ্ছেন। এ জন্য ধন্যবাদ। চাঁদাবাজি যে কোথায় নিয়ে যায়! এখন থানা লেভেলে এলজিইডির যে প্রজেক্ট হয়, সেই প্রজেক্টের লিস্টে লেখা আছে কার কত ভাগ। এর মধ্যে সাংবাদিকদের ভাগ থাকে।’